উল্লাপাড়া

এ ঘোলের স্বাদ যে অন্য কোথাও নেই উল্লাপাড়ায় রমজানে বেড়েছে সলপের ঘোলের চাহিদা

উল্লাপাড়া প্রতিনিধিঃ

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার সলপে উৎপাদিত ঘোল দেশব্যাপি সুস্বাদু খ্যাতি পেয়েছে “সলপের ঘোল” হিসেবে । তাই সারা বছরই এর চাহিদা থাকে অনেক ।

এদিকে ক্রেতাদেরও আগ্রহের কমতি নেই, কে কার আগে কিনবেন । মজুদ শেষ হওয়ার আগেই লোভনীয় এ ভোগ্যপণ্যটি সংগ্রহ করতে চান ক্রেতারা । কারণ এখান থেকেই নিয়ে যান পাইকারি বিক্রেতারাও । আর রমজান এলোতো কথাই নেই । ক্রেতা বেড়ে হয়ে যায় কয়েকগুণ । হিমশিম খেতে হয় কাখানার মালিককে । বিরতি নেই কারখানার কারীগরদের । সকাল থেকে শুরু হয় ঘোল তৈরির কাজ। সারাদিন চলে বিরতিহীনভাবে, ঘোল তৈরি এবং ক্রেতাদের কাছে ঘোল বিক্রির কাজ । সলপের ঘোল সারাদেশে বিক্রয়ের পাশাপাশি এক সময় ট্রেন যোগে প্বার্শবর্তি দেশ ভারতেও বিক্রি হতো ।

স্থানীয়রা বলেন, সলপের ঘোল তৈরির পেছনে আছে ১শ’ বছরের ঐতিহ্য । ইতিমধ্যে গরম ও রোজায় এই ঘোলের চাহিদা ব্যাপক হাড়ে বেড়ে গেছে । দিনরাত কাজ করে চলেছেন ঘোল তৈরী কারীগররা । বিভিন্ন এলাকার পাইকারি ও খুচরা ক্রেতারা এই ঘোল কিনতে ভিড় করছেন উপজেলার সলপ রেল স্টেশনের দোকানগুলোগে ।

উপজেলার সলপ রেল স্টেশন ঘেঁসে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি ঘোল কারখানা । ওই কারখানার মালিকেরা প্রতিদিন ভোরে গ্রামের খামারিদের কাছ থেকে গরুর দুধ সংগ্রহ করে তা তিন-চার ঘণ্টা জ্বাল দিয়ে একটা পাত্রে রেখে দেওয়া হয় । তারপর সেই দুধ জমে গেলে তাতে চিনি ও অন্যান্য উপকরণ মিশিয়ে তৈরি করা হয় সুস্বাদু ঘোল । এই ঘোলের স্বাদ যে অন্য কোথাও নেই ।
শনিবার উল্লাপাড়া উপজেলার সলপ রেল স্টেশন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, স্টেশনের পাশে ঘোলের দোকানগুলো ক্রেতারা ভীড় জমিয়েছে । ক্রেতারা পাত্র নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন । দোকানের সামনে স্টিলের হাড়ি থেকে ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী বিক্রি করছেন বিক্রেতারা । দোকানের পেছনের কারখানায় কর্মীরা ঘোল তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন । অনেকেই দূরদূরান্ত থেকে এ ঘোলের জন্য এখানে এসেছেন। পাইকাররা এখান থেকে ঘোল নিয়ে বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি করবেন । আবার অনেকে পরিবার বা আত্মীয়- স্বজনদের জন্য কিনতে এসেছেন এ ঘোল।
ঘোল বিক্রেতা আব্দুল রাজ্জাক ও খালেক বলেন, প্রতিদিন এলাকায় ২০০ থেকে ২৫০ মণ ঘোল ও মাঠা বিক্রি হয়। প্রতি লিটার ঘোল পাইকারী ৬০ টাকা, মাঠা ৮০ এবং খুচরা প্রতিলিটার ঘোল ৮০ টাকা,মাঠা ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পাবনার বাগুড়া থেকে ঘোল কিনতে আসা আশিকুর রহমান বলেন, আমি প্রতি রোমজান মাসে এই সলপ থেকে প্রতিদিন ৮০ থেকে ১০০ লিটার ঘোল ও মাঠা আমার এলাকায় বিক্রির জন্য নিয়ে যাই । রমজান মাসে ঘোল ও মাঠার বেশ চাহিদা রয়েছে আমাদের এলাকায় ।
তাড়াশ উপজেলার হামকুড়িয়া থেকে ঘোল কিনতে আসা হাফিজুর রহমান বলেন, সলপের ঘোলের সাদ অতুলনীয় । প্রায়ই আমি ঘোল কিনতে আসি । ঘোলের মান অনুযায়ী দাম খুব একটা বেশি না । রমজানে ইফতারের সময় এই ঘোলে অনেকটা প্রশান্তি পাওয়া যায়,তাই চলে আসছি সকাল সকাল ঘোল কিনতে সলপ রেল স্টেশনে ।

ঘোল উৎপাদনকারী আবদুল খালেক জানান, সারাদেশে সলপের ঘোলের বেশ সুনাম রয়েছে । দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ সলপে আসেন ঘোলের স্বাদ নিতে । সারা বছরই এখানে ক্রেতাদের আনাগোনা থাকে । তবে রমজান মাসে সলপের ঘোলের চাহিদা অনেক বেড়ে যায় । রমজানের আগে যেখানে ঘোলের চাহিদা ছিলো ১০ থেকে ১৫ মন বর্তমানে এর চাহিদা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫০ থেকে ৩শ মন । তিনি আরো জানান ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী ঘোল উৎপাদন করতে পারছি না। দুধের সংকট রয়েছে । দূরদূরান্ত থেকে পাইকার ও খুচরা ক্রেতারা আসেন ঘোল কিনতে । আমরা ব্যবসায়ীরা সলপের ঘোলের ঐতিহ্য ধরে রাখতে সর্বক্ষণ সচেষ্ট রয়েছি। আশা করছি সলপের ঘোলের সুনাম দেশজুড়ে আরও ছডিয়ে পড়বে ।
এ বছর এই সলপের ঘোল ১০১ বছর পূর্ণ করবে বলেও তিনি জানান।
এই ঘোলের ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে প্রতিবছর বৈশাখ মাসের প্রথম শুক্রবারে উপজেলার সলপে ঘোল উৎসবের আয়োজন করা হয় ।

এ বিষয়ে উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ উজ্জল হোসেন জানান সলপের ঘোল এ উপজেলার একটি ঐতিহ্যবাহী পন্য । এর চাহিদা সারাদেশেই রয়েছে । রমজান মাসে সলপের ঘোলের চাহিদা বেশি থাকে । আমরা উপজেলা প্রশাসন থেকে নজরদারি করছি । মাঝে মধ্যে ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে জরিমানাও করা হয়, ঘোলের গুণগত মান যেন ঠিক থাকে । ঘোলে ভেজাল দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।