শাহজাদপুর প্রসেস মিলের বিষাক্ত বর্জ্যে করতোয়া নদী এখন দূষণে ভূগছে !
স্টাফ রিপোর্টার, বাবুল আকতার খান:
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে শহরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হওয়া ঐতিহ্যবাহী করতোয়া নদীর পানি সূতা প্রসেসিং বর্জ্যে দূষিত হয়ে উঠেছে। সেই সাথে দূষিত হয়ে উঠছে গোটা এলাকা। সূতা রং করা বিষাক্ত পানির নির্গত বর্জ্যে নদীর মাছ যেমন মারা যাচ্ছে ঠিক তেমনিভাবে নদীতে গোসল করা নারী-পুরুষ,শিশুর শরীরে নানা রকম চর্মরোগ দেখা দিচ্ছে। এ কারণে আগের মতো মাছ আর দেখা যাচ্ছে না । বিষয়টি নিয়ে শাহজাদপুরের সুশিল সমাজ ও সচেতন মহল দারুন উদ্বিগ্ন।
সরেজমিনে ঘুরে করতোয়া নদীর উপর নির্মিত করতোয়া সেতুর উত্তর ও দক্ষিণ প্রান্তরে বেশ কয়েকটি তাঁত শিল্প কারখানার সূতা প্রসেসিং বর্জ্য নিয়মিতভাবে পাইপ দিয়ে করতোয়া নদীতে ফেলার দৃশ্য লক্ষ করা গেছে। সূতা রং করা নানা ক্যামিক্যালের বিষাক্ত বর্জ্য দীর্ঘ কয়েক যুগ ধরে প্রকাশ্যে পাইপ স্থাপন করে নদীতে ফেলে পরিবেশ দূষন করলেও যেন কোন প্রতিকার ছিলনা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। তাই তো দেখার কেউ না থাকায় সহসাই বন্ধ হচ্ছেনা বিষাক্ত বর্জ্য ফেলার কাজ। অথচ করতোয়া নদীর চলন্ত পানিতে নদীর তীরবর্তী হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন গোসল করা সহ এর পানি দিয়ে বিভিন্ন কাজ করছে। নদীতে গোসল করার কারণে নানা রকম পানি বাহিত রোগে যেমনটা মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে তেমিন জেলেরা আশানুরুপ মাছ পাচ্ছেনা নদীতে। মাঝে মধ্যেই জেলেদের জালে রোগাক্রান্ত মাছ ধরা পড়ছে। এসব রোগাক্রান্ত মাছ খেয়েও অসুস্থ হয়ে পড়ছে মানুষ। যার ফলে দ্রæত নদীর চলন্ত পানিতে মিলের বিষাক্ত নির্গত বর্জ্য ফেলা বন্ধের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ সময়ের দাবী হয়ে উঠেছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন সচেতন মহল। পরিবেশবিদরাও এটাকে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য চরম হুমকি বলে উল্লেখ করেছেন। নদী তীরবর্তী দু পাড়ের হাজার হাজার মানুষের প্রাণের দাবী সূতা প্রসেসিং বর্জ্য যেন নদীর পানিকে আর বিষাক্ত করতে না পারে। নদীর জীব বৈচিত্র মাছ সহ সকল প্রাণীর স্বাস্থ্য সুরক্ষা করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে।
তাছাড়া নদী তীরবর্তী তাঁত শিল্প কারখানার মালিকগণ প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারছেনা সাধারণ মাুনষও। এক অভিযোগে জানা যায়, প্রসেস মিলের বিষাক্ত বর্জ্য পানি নদীতে ফেলানোর কোন নিয়ম না থাকলেও এরা অনিয়মই নিয়ম করে চলছে। ইতিপূর্বে পরিবেশবিদরা ৬টি প্রসেস মিলের মালিককে ১২ লক্ষ টাকা জরিমানা করলেও এর পরও তাদের কর্মকান্ড থেমে থাকেনি। স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, দীর্ঘদিন ধরে প্রভাবশালী মহল করতোয়া নদীতে বিষাক্ত বর্জ্য ফেলায় নদী এখন মৃত প্রায়। সেই সাথে দখলের চলছে মহা উৎসব। অনেকে নদীর চড়ে ইরি-বোরো ধান চাষ করলেও সেখানে আর ফসল ফলছে না। ইতিমধ্যেই আন্দোলন সংগ্রাম হলেও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণে দিনদিন প্রসেস মিলের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে । সেই সাথে হারিয়ে ফেলছে আমাদের করতোয়া নদী। বাঘাবাড়ী থেকে শাহজাদপুর পর্যন্ত প্রায় অনেক প্রসেস মিলের পানি করতোয়া নদীতে ফেলায় করতোয়া এখন দূষণে ভূগছে।