উল্লাপাড়ায় সড়ক বিভাগের রাস্তায় পৌরসভার ড্যামেজ ফি’র নামে কোটি টাকার চাঁদা বাজী, নেপথ্যে ৪ কাউন্সিলর
উল্লাপাড়া প্রতিনিধিঃ মোঃ আব্দুস ছাত্তার
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া পৌর শহরে রোড ড্যামেজ ফি আদায়ের নামে বছরে চলছে কোটি টাকার চাঁদাবাজী । পৌর শহরের ৪টি পয়েন্ট থেকে প্রতিদিন প্রকাশ্যে টোকেন দিয়ে এ চাঁদা আদায় করা হচ্ছে । ৪ জন কাউন্সিলর নেপথ্যে থেকে নিজের স্বজনদের নামে উল্লাপাড়া পৌরসভা থেকে লিজ নিয়ে তা প্রতিদিন ৩ হাজার টাকায় অন্যের কাছে সাব লিজ দিয়ে এ চাঁদা আদায় করাচ্ছেন বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে ।
যেসব রাস্তা থেকে পৌরসভার টোকেন দিয়ে রোড ড্যামেজ ফি আদায় করা হচ্ছে সে রাস্তা গুলো সবই সড়ক বিভাগের । একই সঙ্গে আর একটি গ্রুফ এসব পথে চলাচলকারী সিএনজি চালিত অটোরিকশা থেকে পুলিশের নামেও করছে চাঁদাবাজী ।
পরিবহন চালক-মালিকদের অভিযোগে জানা যায়, উল্লাপাড়ায় সড়ক বিভাগের যে ৪ টি পয়েন্ট থেকে চাঁদা আদায় করা হয় তা হলো পুরাতন বাসস্ট্যান্ড, শ্যামলীপাড়া বাসস্ট্যান্ড, ঘোষগাঁতী তেতুলতলা মোড় ও উল্লাপাড়া রেল গেট ।
পৌরসভার রোড ড্যামেজ ফি’র নামে সাব লিজ গ্রহিতারা পৌরসভার নামে রশিদ ছাপিয়ে যানবাহনের প্রকারভেদে- ১০ চাকার গাড়ি ৭০ টাকা, ৬ চাকার গাড়ি ৫০ টাকা, বাস ৫০ টাকা, কাভার্ড ভ্যান ৫০ টাকা, পিকাপ ভ্যান ৩০ টাকা, মাইক্রো ৩০ টাকা, সিএনজি অটোরিকশা ২০ টাকা, ইজিবাইক ২০ টাকা, নছিমন ২০ টাকা হারে চাঁদা আদায় করছে । একই সাথে সিরাজগঞ্জ জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপ ও জেলা ট্র্যাক কাভার্ড ভ্যান পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের নামেও আলাদা টোকেন দিয়ে ৫০ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে ।
চাঁদা আদায় করা এসব পয়েন্টগুলোর মধ্যে পৌরসভার কোন সড়ক নেই । সব সড়কই সড়ক বিভাগের । অথচ এসব পয়েন্টে পৌরসভার ড্যামেজ ফি’র নামেই দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে এমন নীরব চাঁদাবাজী ।
পৌরসভার ড্যামেজ ফি’র নামে প্রত্যেকটি পয়েন্ট থেকে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলরগণ মাসে ৯০ হাজার টাকা করে পাচ্ছেন বলে একটি সূত্র জানিয়েছে । তবে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের সাথে এ বিষয়ে কথা হলে তারা চাঁদা আদায়ের কথা স্বীকার করে জানান চাঁদার অংক সঠিক নয় । তারা সড়ক বিভাগের রাস্তার ওই ৪ টি পয়েন্ট পৌরসভা থেকে টেন্ডারের মাধ্যমে লিজ নেওয়া হয়েছে । তাদের দাবী উল্লাপাড়া পৌরসভা প্রতিষ্ঠার পর থেকে এসব রাস্তা থেকে একই কায়দায় রোড় ড্যামেজ ফি আদায় করে আসছে । সেই নিয়মেই রোড ড্যামেজ ফি আদায় করা হচ্ছে।
পরিবহন চালকদের অভিযোগ, পৌরসভার একটি পয়েন্টে চাঁদা আদায় কারিকে দাবিকৃত চাঁদা পরিশোধ করার পরেও অপর পয়েন্টগুলোতে চাঁদা দিতে হচ্ছে । চাঁদা না দিলে আদায় কারিদের হাতে লাঞ্চিত হতে হয় । তারা আরো জানান, উল্লিখিত পয়েন্টগুলোতে পুলিশের নামে সিএনজি চালিত অটোরিকশার কাছ থেকে প্রতি মাসে ১শ’ টাকা করে পৃথক চাঁদা আদায় করা হচ্ছে । এ বিষয়ে উল্লাপাড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মীর শাহীন শাহ পারভেজ জানান, সড়ক বিভাগের রাস্তা থেকে পৌরসভার ড্যামেজ ফির নামে পরিবহন থেকে কোন চাঁদা তুলতে দেওয়া হবে না । উল্লেখিত রাস্তাগুলো পৌরসভার কি না সেটা ইতিমধ্যে পৌরসভার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে পুলিশের নামে সিএনজি অটোরিকশা থেকে চাঁদা আদায়ের বিষয়টি তারা অবহিত নন । প্রমাণ পেলে আদায়কারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।
এ ব্যাপারে উল্লাপাড়া পৌরসভার মেয়র এস.এম. নজরুল ইসলাম জানান, উল্লিখিত রাস্তাগুলো সড়ক বিভাগের । তিনি আরো জানান,পৌরসভা এলাকায় ৪টি সিএনজি স্ট্যান্ডে পৌরসভার নিজস্ব রাস্তা থেকে রোড ড্যামেজ ফি আদায়ের জন্য লিজ দেওয়া আছে। এর বাইরে সড়ক বিভাগের রাস্তা থেকে যদি কেউ কোন পরিবহন থেকে রোড ড্যামেজ ফি-এর নামে চাঁদা আদায় করে সেটা অবৈধ । এর দায়ভার লিজ গ্রহিতাদের উপরেই বর্তায় । বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।