উল্লাপাড়ায় ক্ষতির মুখে দুগ্ধ উৎপাদন খামারি ও কৃষক,পানির চেয়েও কম দামে বিক্রি হচ্ছে দুধ
উল্লাপাড়া প্রতিনিধিঃ মোঃ আব্দুস ছাত্তার
করোনা ভাইরাস সংক্রামন নিয়ে সারা দেশ এখন উদ্ধিগ্ন । এ অবস্থায় সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার দুগ্ধ্ সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠান আকিজ, প্রাণ, ব্র্যাক এবং মিল্কভিটা তাদের দুধ সংগ্রহ কার্যক্রম সিমিত করে দিয়েছে । আর এতে ক্ষতির মুখে দুগ্ধ উৎপাদন গো খামারি ও কৃষক । কম দামে বিক্রি হচ্ছে দুধ৷। এতে খামারের উৎপাদিত দুধ নিয়ে মহা বিপাকে পড়েছেন উপজেলার ছোট বড় গো খামারি ও কৃষক ।
উপজেলা শহর ও হাট-বাজারের মিষ্টির দোকান,চা স্টল বন্ধ । শহর ও হাট-বাজারে লোক সমাগম কমে যাওয়ায় খোলা বাজারেও খুচরা দুধের চাহিদা কমে গেছে । এ অবস্থায় কৃষক আর ছোট বড় খামারিরা বাধ্য হয়ে গ্রাম গঞ্জের হাট-বাজারে পানির চেয়েও কম দামে দুধ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছে তারা ।
রবিবার সকালে সরেজমিন উল্লাপাড়া উপজেলার কয়ড়া বাজারে গিয়ে দেখা যায়,কৃষক ও খামারীরা করোনা আতঙ্কের তোয়াক্কা না করে দুধ নিয়ে বাজারে এসেছেন । সারি সারি দুধের বালতি নিয়ে ক্রেতার অপেক্ষায় বসে আছেন তারা । এ বাজারে দেখা যায় ক্রেতার চেয়ে বিক্রেতার সংখ্যাই বেশি । মিষ্টির দোকান, চা-স্টল ও দুধ সংগ্রহ কেন্দ্র বন্ধ থাকায় ক্রেতা ও পাইকার তুলনা মুলক কমে যাওয়ায় ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি দরে দুধ বিক্রি করতে হচ্ছে । অপর দিকে লাহিড়ী মোহনপুর ও সুজা বাজারে একই চিত্র লক্ষ্য করা যায় । এখানেও ক্রেতা ও পাইকার না থাকায় ১৫ থেকে ২৫ টাকা কেজি দরে দুধ বিক্রি হচ্ছে । ক্রেতা না থাকায় বেশিরভাগ কৃষক-খামারী ক্ষোভে দুধ নিয়ে বাড়ি ফিরে যায় ।
বাজারে দুধের দাম না পেলেও খামারীরা পশুর গো খাদ্যের যোগান দিতে গিয়ে পড়েছেন বিপাকে। ইতিমধ্যে করোনার কারণে সংকটের অযুহাতে বেড়েছে গো খাদ্যের দাম । খৈল,ভূসি,খড় সহ সব গো খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। গবাদিপশু বাঁচাতে খামারীরা উচ্চমূল্য দিয়ে গো খাদ্য কিনে খাওয়াতে বাধ্য হচ্ছেন । এতে ক্ষতির মুখে পড়েছে কৃষক ও খামারীরা ।
উপজেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগের তথ্যনুযায়ী, উল্লাপাড়ায় ৫২ হাজার দুগ্ধজাত গাভী থেকে ২লাখ, ৫৩ হাজার,১৭২লিঃ দুগ্ধ উৎপাদন হয় । এর বাইরে এ উপজেলায় আরও প্রায় দেড় হাজার কৃষক গরু লালন-পালন ও দুগ্ধ উৎপাদনের সাথে জড়িত ।
প্রাণ ডেইরি, আকিজ,মিল্ক ভিটা সহ প্রায় ২০টি দেশীয় প্রতিষ্ঠান এসব কৃষক ও খামারীদের কাছ থেকে তরল দুধ সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াজাত করে সারাদেশে বাজারজাত করে থাকে। এসব কোম্পানীগুলো করোনা পরিস্থিতির কারণে নামে মাত্র একবেলা সামান্য দুধ সংগ্রহ করছে বলে জানালেন লাহিড়ী মোহনপুর ইউনিয়নের সুজা গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক । তিনি আরো জানান আগে পাইকার ও খোলা বাজারে বিক্রেতাদের কাছে দুধ বিক্রি করা হতো ৫০ টাকা কেজি দরে । কিন্তু করোনার ভয়ে- আতঙ্গে ক্রেতার উপস্থিতি কমে যাওয়ায় এখন ১৫ থেকে ২৫ টাকা দরে দুধ বিক্রি হচ্ছে । লাহিড়ী মোহনপুর দুগ্ধ শীতলীকরণ কেন্দ্র আকিজ ফুড এন্ড বেভারেজ লিমিটেড এর পরিচালক মোঃ হাবিবুর রহমান জানান করোনার কারণে সারাদেশে গাড়ি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়ায় নিয়মিত দুধ সংগ্রহ করা যাচ্ছেনা । ফলে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে ।
এমন পরিস্থিতিতে স্থবির উল্লাপাড়া উপজেলার গ্রামীণ অর্থনীতি । লাগাতার এ অবস্থা চলতে থাকলে দুগ্ধ সমৃদ্ধ এ জনপদের কৃষকদের পথে বসতে হবে । তাই দ্রুত এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগ সহ সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন কৃষক ও গো খামারীগণ ।