উল্লাপাড়া

উল্লাপাড়ায় কালিগঞ্জ খেয়া ঘাটে নৌকার পরিবর্তে বাঁশ-কাঠের সাঁকোয় পারাপার

উল্লাপাড়া প্রতিনিধিঃ

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার কালিগঞ্জ খেয়া ঘাটে ফুলঝোড় নদীর পানি কমে যাওয়ায় নৌকার পরিবর্তে নদী পারাপারে এই প্রথম বাঁশ-কাঠের সাঁকো দেওয়া হয়েছে । যুগের পর যুগ ধরে প্রতিদিন শত শত মানুষ খেয়া নৌকায় কালিগঞ্জের ফুলঝোড় নদী পার হয়েছেন । নদীর পানি কমায় নৌকা না চলায় বাঁশ-কাঠের সাঁকোয় পারাপার হচ্ছেন । নদীর দু’পাড়ের ৩টি উপজেলার মানুষ দীর্ঘ দিন ধরে সড়ক বিভাগের নিকট একটি সেতু নির্মানের দাবি জানিয়ে আসছেন । প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে খেয়া ঘাট মাঝি মেঃরতন আলী প্রামানিক(৬৫) নৌকায় করে লোকজন ও বিভিন্ন মালামাল পারাপার করে আসছে । নদীর পানি কমে যাওয়ায় এবারেই প্রথম লোকজন পারাপারে নিজ টাকায় সাঁকো দিয়েছেন । প্রতি বছর ১লা বৈশাখে তিনি জেলা পরিষদ থেকে ডাক ধরে নিয়ে নৌকায় জনগন ও মালামাল পারাপার করে আসছে । বয়স হয়ে যাওয়ায় তিনি বাংলা ১৪৩২ সালের পর আর খেয়া ঘাট ডাক ধরবেন না । এবারে নদীর ঘাট এলাকায় পানি কম থাকায় তার নিজ টাকায় সাঁকো দিয়েছেন ।

উল্লাপাড়া উপজেলার বড়হর ইউনিয়নের কালিগঞ্জ গ্রামের পাশ দিয়ে ফুলঝোড় নদী বয়ে গেছে । কালিগঞ্জ এলাকায় সারা বছরই ওই নদীতে পানি থাকায় নৌকায় সব পারাপার হয় । আর এ কারণেই কালিগঞ্জ খেয়া ঘাটটি জেলা পরিষদ থেকে প্রতি বছর সরকারীভাবে ইজারা দেওয়া হয় । এছাড়াও কালিগঞ্জ খেয়া ঘাটের দুই পাশে সড়ক ও জনপথ ( সওজ) বিভাগের প্রায় ৩০ কিলোমিটার জেলা সংযোগ পাকা সড়ক পথ রয়েছে । উল্লাপাড়া উপজেলার সাথে কালিগঞ্জ খেয়া ঘাট হয়ে জেলার বেলকুচি , কামারখন্দ উপজেলা হয়ে সিরাজগঞ্জ জেলা শহরের সাথে সংযোগ সড়ক বিভাগের সড়ক পথের যোগাযোগ রয়েছে । কালিগঞ্জ খেয়া ঘাট হয়ে নদীর পূর্ব পাড়ের চর কালিগঞ্জ, বন্যাকান্দি, দমদমা, মনিরপুর, বেতকান্দি, কর্ণসুতী, শাহবাজপুরসহ আরো বিভিন্ন এলাকার লোকজন উল্লাপাড়ায় আসেন। একই ভাবে নদীর পশ্চিম পাড়ের বিভিন্ন এলাকার লোকজন খেয়া ঘাট হয়ে পূর্ব পাড়ের বেলকুচি, কামাখন্দ উপজেলায় ও সিরাজগঞ্জ জেলা শহরে যাতায়াত করে থাকে । ওই খেয়া ঘাটে একটি সেতু নির্মানের জন্য ৩ উপজেলা বাসী দীর্ঘ দিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন । তাদের দাবির প্রেক্ষিতে সিরাজগঞ্জ সড়ক বিভাগ কয়েকবার সমীক্ষা করে সেতুটি নির্মানের প্রস্তাবনা সেতু ভবনে পাঠিয়েছেন । এলাকাবাসীদের সাথে আলাপে জানা যায় যুগের পর যুগ ধরে কালিগঞ্জ খেয়া ঘাটে নৌকায় নদী পারাপার হতে হচ্ছে । নদীর পানি কমে যাওয়ায় খেয়া ঘাটে নদী পারাপারে এই প্রথম বাঁশ-কাঠের সাঁকো দেওয়া হয়েছে ।

গত পহেলা মার্চ থেকে সাঁকোটি নির্মাণের পর জনসাধারণের চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে । সেদিন থেকেই ওই সাঁকো দিয়ে সবাই মোটর সাইকেল, রিক্সা, অটোরিকশা, বাই সাইকেল সহ বিভিন্ন মালামাল নিয়ে পারাপার সহজেই হওয়া যাচ্ছে । তারা আরো বলেন এই খেয়া ঘাটে একটি সেতু নির্মানের জন্য দীর্ঘ দিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন । সরেজমিনে ঘাটটিতে গিয়ে দেখা গেছে নানা পেশার লোকজন সাঁকো দিয়ে পার হচ্ছেন। কালিগঞ্জ খেয়া ঘাটে নৌকায় নিয়মিত পার হওয়া আঃ রহমান , মনির হোসেন বলেন তারা বছরের পর বছর ঘাটটিতে খেয়া নৌকায় পারাপার হয়েছেন । এখানে কোন কালেই সাঁকো ছিলো না। এই প্রথম ঘাটে সাঁকোয় পার হলেন ।

কালিগঞ্জ খেয়া ঘাটের ইজারাদার মোঃ রতন প্রামাণিক(৬৫) বলেন কালিগঞ্জ খেয়া ঘাটটি প্রতি বছর সরকারী ভাবে জেলা পরিষদ থেকে ইজারা ডাক হয় । তিনি প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে ঘাটটি ইজারা ডেকে নিয়ে চালাচ্ছেন । তবে এর মধ্যে চার বছর বাদ ছিলেন । খেয়া ঘাটের আশে পাশের গ্রামের পরিবারগুলোর কাছ থেকে পারাপার বাবদ ফসল তোলেন। আবার অনেকেই এককালীন নগদ টাকা দেন। এছাড়া বিভিন্ন এলাকার লোকজন নগদ টাকায় পারাপার করেন । তিনি আরো বলেন এ বছর খেয়া ঘাট এলাকায় নদীতে এখন পানি কম থাকায় নৌকা না চলায় সাঁকো বসানো হয়েছে । সাঁকোটি নির্মানে তার প্রায় ১ লাখ টাকা খরচ হয়েছে । তিনি বাংলা ১৪৩২ সালের জন্য ঘাটটি ইজারা নিয়েছেন । বয়সের কারনে তিনি আর ঘাট ইজারা ডাক ধরবেন না ।

মোঃ আব্দুস ছাত্তার

উল্লাপাড়া, সিরাজগঞ্জ ২৩/০৫/২