উল্লাপাড়ায় রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেন লাইনচ্যুত,আগুনে পুড়ে গেছে ট্রেনের ইঞ্জিনসহ শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ৩টি বগি
উল্লাপাড়া প্রতিনিধিঃ মোঃ আব্দুস ছাত্তার
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় বৃহস্পতিবার দুপুরে ঈশ্বরদী-ঢাকা রেলপথের উল্লাপাড়া রেল ষ্টেশনের নিকট ঢাকা থেকে রংপুরগামী রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনটি দূর্ঘটনার কবলে পড়ে। ওই দূর্ঘটনায় রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনের ইঞ্জিন সহ ৩টি বগি আগুনে পুড়ে যায়। আগুনে পুড়ে যাওয়া বগি তিনটি শীততাপ নিয়ন্ত্রিত। এতে লাইনচ্যুত হয় আরো ৭টি বগি। দূর্ঘটনায় কেউ মারা না গেলেও ট্রেনের ২ জন চালক সহ আহত হয় ২০ জন। এর মধ্যে ট্রেনের ২ জন চালকের অবস্থা গুরত্বর। প্রত্যাক্ষদর্শী, ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা থেকে রংপুরগামী রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনটি দুপুর ২ টার দিকে উল্লাপাড়া রেল ষ্টেশনের সম্মুখ পয়েন্টে (ফেস পয়েন্ট) ঢোকার পথে ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়। মিটার গেজের এই ট্রেনটি ২নং লাইনে ঢোকার কথা ছিল। কিন্তু ট্রেনটি ১নং লাইনে ব্রোড গেজে ঢোকার মুখেই এ দূর্ঘটনায় পতিত হয়।
দূর্ঘটনার সময় বিকট আওয়াজে আশে পাশের লোকজন ছুটে আসে এবং উদ্ধার কাজে নিয়োজিত হয়। দূর্ঘটনায় ট্রেনের ইঞ্জিন সহ শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ৩টি বগি সহ আরো ৪টি বগি লাইনচ্যুত হয়। দূর্ঘটনায় ট্রেনের ইঞ্জিন রেল লাইন থেকে ১৫ ফুট দূরে ছিটকে পড়ে আগনুন ধরে যায় এবং দ্রুত ওই আগুন ইঞ্জিনের সাথে লাগানো ৩টি শীততাপ নিয়ন্ত্রিত বগিতে ছড়িয়ে পড়ে। ওই সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত উদ্ধারকারীরা শীততাপ নিয়ন্ত্রিত বগির জানালার গ্লাস ভেঙ্গে যাত্রীদের টেনে হেচড়ে বের করে। আগুনে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ৩টি বগি ও ট্রেনের ইঞ্জিন ক্ষতিগ্রস্থ হয়। উদ্ধার কাজে অংশগ্রহনকারী সিরাজগঞ্জের ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক মঞ্জুরুল হক জানান, দূর্ঘটনার খবর পেয়ে তারা দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে আগুন নিভানো এবং উদ্ধার কাজে অংশ নেয়। প্রায় ঘন্টা খানেক চেষ্টার পর ইঞ্জিন সহ ৩টি বগির আগুন নিয়ন্ত্রনে আসে।
মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ আলী যাত্রী ছিলেন ওই ট্রেনের। তারা বগি ছিল ইঞ্জিনের সাথে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত। দূর্ঘটনা নিয়ে তিনি বলেন, উল্লাপাড়া ষ্টেশনের ফেস পয়েন্টের ঢোকার মুখে ট্রেনের ইঞ্জিন কয়েকবার কেপে ওঠে। এর পরপরই তার বগিটি ২/৩ বার বড় ধরের ঝাকুনি দিয়ে লাইনচ্যুত হয়ে পড়ে। পিছনের শীততাপ নিয়ন্ত্রিত বগিতে আগুন ধরে গেলে ঘটনাস্থলে উপস্থিত জনগন শীততাপ নিয়ন্ত্রিত বগির জানালার গ্লাস ভেঙ্গে তাকে টেনে হেচড়ে বের করে। এ ব্যাপারে উল্লাপাড়া রেল ষ্টেশনের মাষ্টার রফিকুল ইসলাম জানান, রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনটি ২নং লাইনে যাওয়ার জন্য লাইন ক্লিলিয়ার দেয়া ছিল। কিন্তু ট্রেনটি পেস পয়েন্টে এসেই ঝাম্পিং করে ট্রেনটি ১নং লাইনে ঢুকে পরে এবং দূর্ঘটনায় কবলিত হয়। রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনটি উল্লাপাড়া ষ্টেশনে বিরতি না থাকায় দ্রুত গতিতেই উল্লাপাড়া ষ্টেশনের দিকে আসছিল। দূর্ঘটনার ফলে ঢাকার সাথে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
খবর পেয়ে দূর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন সিরাজগঞ্জের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক রায়হানা ইসলাম, উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ আরিফুজ্জামান সহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগন। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (বিকেল ৫ টা) রেল বিভাগের কোন কর্মকর্তা ও উদ্ধারকারী ট্রেন ঘটনাস্থলে এসে পৌছে নি। তবে রেলের একটি সূত্রে জানা যায়, পশ্চিম রেল কর্তৃপক্ষ পাকসী রেলের বিভাগীয় অফিসের ডিটিও আব্দুল্লাহ আল মামুন কে আহবায়ক করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।