উল্লাপাড়ায় শিক্ষকের চড়ে শ্রবণশক্তি হাড়ালো স্কুল ছাত্র
উল্লাপাড়া প্রতিনিধিঃ মোঃ আব্দুস ছাত্তার
ক্লাসে পড়া না পারায় প্যারা শিক্ষকের চড়ে ডান কানের শ্রবণশক্তি হারিয়ে ফেলল স্কুল ছাত্র ইসমাইল । সে উপজেলার সলংগা ইউনিয়নের চক চৌবিলা গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে। সে উপজেলার চক চৌবিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ২০১৯ শিক্ষাবর্ষে পিইসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। ইসমাইলের পরবর্তী জীবন নিয়ে চরম হতাশায় এখন তার পরিবার।
ইসমাইলের মা মঞ্জুয়ারা খাতুন ওই স্কুলের প্যারা শিক্ষক ফরিদা খাতুনের বিরুদ্ধে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে । এ বিষয়ে শিক্ষা অফিস থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে । অভিযোগ থেকে জানা যায়, গত বছরের নভেম্বর মাসে ৫ম শ্রেণীর ক্লাস নিচ্ছিলেন প্যারা শিক্ষক ফরিদা খাতুন । ইসমাইল পড়া না পারায় ফরিদা তার ডান কানে সজোরে চড় দেন । সঙ্গে সঙ্গে কান দিয়ে রক্ত ঝরতে থাকে । গুরুতর আহত অবস্থায় ইসমাইলকে উল্লাপাড়ায় হাই কেয়ার হিয়ারিং সেন্টারে ভর্তি করে চিকিৎসা করানো হয় । এখানে তার কোন উন্নতি না হলে তাকে ডিসেম্বরের প্রথম দিকে ঢাকায় জাতীয় নাক কান গলা ইনস্টিটিউটে (এনআইইএনটি) ভর্তি করা হয়। এখানেও ইসমাইলের কানের কোন উন্নতি হয়নি ।
মঞ্জুয়ারা খাতুন জানান, গত ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে তিনি তার ছেলেকে বাড়িতে ফিরিয়ে এনেছেন। ডাক্তাররা তাকে বলেছেন ইসমাইল ডান কানে আর কখনও শুনবে না। এ অবস্থায় তার সন্তান কীভাবে লেখাপড়া করবে বা ভবিষ্যতে তার কর্মজীবনে এর প্রভাব কীভাবে পড়বে তা নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছে তার পরিবার। তিনি ঢাকা থেকে ছেলেকে নিয়ে ফিরে আসার পর প্যারা শিক্ষক ফরিদা খাতুনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চক চৌবিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতির কাছে আবেদন জানিয়েছেন। কিন্তু সভাপতি তার আবেদন আমলে নেননি । পরে তিনি এ ব্যাপারে উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে ফরিদা খাতুনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন ।
এ বিষয়ে চক চৌবিলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল হান্নান জানান, ঘটনাটি অনেক আগের। ফরিদা খাতুন এখন স্কুলে নেই। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বরে তার প্যারা শিক্ষকের মেয়াদ শেষ হয়েছে । তার পরেও মঞ্জুয়ারার অভিযোগটি তিনি আমলে নিয়ে দেখছেন। এ ব্যাপারে স্কুলের সভাপতি মতিয়ার রহমানের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, এই ঘটনার বিষয়ে তিনি বাদি বিবাদীর মধ্যে একটা মীমাংসা করার চেষ্টা করছেন ।
উল্লাপাড়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এমজি মাহমুদ ইজদানীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ বিষয়টি তাকে দেখতে বলেছেন। তিনি ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট ক্লাস্টারের সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুর রাজ্জাককে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন। ৭ কর্ম দিবসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে ।
ইজদানী আরো জানান, স্কুলে আপদকালীন সময়ে প্যারা শিক্ষক নিয়োগের বিধান রশেছে । তবে সেক্ষেত্রে উপজেলা শিক্ষা অফিসের অনুমিত নিতে হয় । কিন্তু স্কুল কমিটি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার অনুমতি ছাড়াই প্যারা শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছিলেন । তবে প্যারা শিক্ষক উপজেলা শিক্ষা অফিসের আওতাধীন নন । সেক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ নেই । তারপরেও সামাজিক ভাবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তিনি সহযোগিতা দেবেন।অভিযুক্ত প্যারা শিক্ষক ফরিদা খাতুনের সঙ্গে মুঠোফোনে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।