পলাশবাড়ীতে লাশ নিয়ে টানাটানি লাশ পেলো ২য় স্ত্রী রুনা লায়লা

আবির হোসাইন শাহীন, নিজস্ব প্রতিবেদক

গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে একটি লাশ নিয়ে হিন্দু ও মুসলিম স্ত্রীর টানাটানি। অবশেষে লাশ পেলো ২য় স্ত্রী রুনা লায়লা। ঘটনাটি ঘটেছে পলাশবাড়ী উপজেলার ১নং কিশোরগাড়ী ইউনিয়নের কিশোরগাড়ী গ্রামের নেকটগাড়ী পাড়ায়।

ঘটনার বিবরণে সরেজমিনে প্রকাশ, ওই গ্রামের তিলক চন্দ্র রবিদাস ওরফে তিলকা রবিদাসের ছেলে দিলীপ চন্দ্র রবিদাস ওরফে দিলচান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে চাকরি নেয়। একপর্যায়ে সে একই সম্প্রদায়ের গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার ফতুল্লাপুর এলাকার অর্জুন চন্দ্র রবিদাস ওরফে গবরা’র মেয়ে রাজ বসিয়া রানীকে বিয়ে করে সংসার করে। এ সংসার জীবনে দিলীপ ২ মেয়ে ও ২ ছেলের বাবা হয়। এ চাকরি করাকালীন দিলীপ চন্দ্র বগুড়া জাহাঙ্গীরাবাদ সেনা ক্যাম্পে দীর্ঘদিন কর্মজীবন অতিবাহিত করেন। এ সময় ইরাক কুয়েত যুদ্ধের সময় আর্মির মিশনে বিদেশ যাওয়ার সময় হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করে দিলীপ চন্দ্র নাম পরিবর্তন করে মোঃ আবু বক্কর সিদ্দিক নাম ধারন করে বিদেশে মিশনে যান।

পরে আবু বক্কর সিদ্দিক রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া উপজেলার উত্তর পানাপুকুর গ্রামের মোঃ আঃ রাজ্জাকের মেয়ে রুনা লায়লাকে ২য় স্ত্রী হিসেবে বিয়ে করে বগুড়ার জাহাঙ্গীরাবাদ এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে ২য় স্ত্রীসহ বসবাস করতে থাকেন। আর এসময় আবু বক্কর সিদ্দিক ৩ বার পবিত্র ওমরা হজ্জ্ব পালন করেন বলে রুনা জানায়। তাছাড়া ২য় স্ত্রী ২১ বছরে কোন সন্তানের মা হতে পারেন নি।

এদিকে আবু বক্কর সিদ্দিক ২০০৪ সালে অবসর গ্রহণ করেন। অবসরের পর আবু বক্কর সিদ্দিক বেশ কিছুদিন হলো অসুস্থ হয়ে পড়েন। গত ২১ এপ্রিল আবু বক্কর সিদ্দিকের হার্ট আ্যটাক করলে ২য় স্ত্রী স্বামীকে বগুড়া সিএমএইচ এ ভর্তি করান।

চিকিৎসা চলাকালীন প্রথম স্ত্রীর ছেলে অমল চন্দ্র রবিদাস ২য় মা রুনা লায়লাকে রহস্যজনক কারনে না নিয়ে ধর্মান্তরিত বাবা আবু বক্কর সিদ্দিককে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেবার পথিমধ্যে ২৮ এপ্রিল রাত ১২ টার দিকে রোগী মারা যায়।

পরে অমল বাবার লাশ পলাশবাড়ী উপজেলার কিশোরগাড়ী ইউনিয়নের কিশোরগাড়ী গ্রামের নেকটগাড়ী নিজ বাড়িতে নিয়ে আসে। এক পর্যায়ে কবর খননসহ হিন্দু (রবিদাস) শাস্ত্র অনুযায়ী সব আনুষ্ঠানিকতা চলতে থাকে।

এ খবর ২য় স্ত্রী রুনা লায়লা জানতে পেরে স্বামীর বাড়িতে এসে মুসলিম রীতি অনুসারে কাফন-দাফন ও জানাজা করে কবরস্থ করার কথা বলেন। আর এতে আপত্তি জানায় প্রথম পক্ষের স্ত্রী সন্তানেরা। তারা হিন্দু (রবিদাস) শাস্ত্র অনুযায়ী লাশের সৎকারের ব্যবস্হা করার উদ্যোগ নিলে নানা জল্পনা কল্পনার সৃষ্টি হয়।

বিষয়টি নিয়ে পলাশবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মেজবাউল হোসেন, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবু বকর প্রধান, এলাকায় ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম রিন্টু, ওসি (তদন্ত) মতিউর রহমান,থানা পুলিশ, গনমাধ্যম কর্মী ও স্হানীয়বাসী সঠিক সিদ্ধান্তে আসার জন্য আলোচনা চালান।

অবশেষে সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ২য় স্ত্রী রুনা লায়লাকে স্বামী আবু বক্কর সিদ্দিকের লাশ তাকে বুঝিয়ে দেয়া হয়। ২য় স্ত্রী রুনা লায়লা স্বামীর লাশ তার এলাকায় নিয়ে ইসলামী শরা শরিয়ত অনুযায়ী জানাজা শেষে দাফন কাফনের ব্যবস্হা করবেন। এসময় লাশের বাড়িতে ১ম স্ত্রী ছেলেমেয়েসহ এলাকাবাসীর মাঝে এক করুণ দৃশ্যের অবতারনা হয়।