সিরাজগঞ্জে ১১ঘন্টায় ৭স্কুলছাত্রীকে বাল্যবিবাহ থেকে রক্ষা করলেন এসিল্যান্ড !

আজিজুর রহমান মুন্না,সিরাজগঞ্জ ঃ           

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলায় একই দিনে ৭ স্কুল ছাত্রীকে বাল্যবিবাহ থেকে রক্ষা করেছেন সদরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আনিসুর রহমান।  শুক্রবার (৭ জুন)  দুপুর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে এ বাল্যবিবাহগুলো বন্ধ করা হয়। প্রথমে দুপুর সাড়ে ৩ টায় সিরাজগঞ্জ সদরের ছোনগাছা ইউনিয়নের পোটল ছোনগাছা গ্রামের দশম শ্রেণীর ছাত্রী শারমিন সুলতানা (১৪), বিকেল ৫ টায় রতনকান্দি   ইউনিয়নের ফুল বয়ড়া গ্রামে দশম শ্রেণীর ছাত্রী মোছাঃ মহুয়া খাতুন (১৪), সন্ধ্যা ৬  টায় রতনকান্দি ইউনিয়নের রুপের বেড় গ্রামে দশম শ্রেনীর ছাত্রী সুবর্ণা খাতুম মীম (১৪), সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টায় বহুলী ইউনিয়নের কদমপাল গ্রামে দশম শ্রেণীর ছাত্রী তামান্না খাতুন মিশু (১৫),রাত ৯.০০ টায় শিয়ালকোল ইউনিয়নের ধুকুরিয়া দক্ষিণপাড়ায় সপ্তম শ্রেনীর ছাত্রী ফারজানা খাতুন (১২), রাত ১০ টায় সয়দাবাদ ইউনিয়নের কড্ডা কৃঞ্চপুর ভূইয়াপাড়া গ্রামে মোছাঃ হোসনেয়ারা খাতুন (১৭) এবং রাত ১১ টায় রতনকান্দি ইউনিয়নের কুড়িপাড়া গ্রামে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী মিম খাতুন (১১) এর বাল্যবিবাহ বন্ধ করা হয়। আদালত সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার দুপুরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সিরাজগঞ্জ সদরের ছোনগাছা ইউনিয়নের পোটল ছোনগাছা গ্রামে সংগীয় ফোর্স নিয়ে কনের বাড়ীতে উপস্থিত হন ভ্রাম্যমাণ আদালত। তখন কনের বাড়ীতে কনে পোটল ছোনগাছা গ্রামের মোঃ আঃ জলিল খান এর মেয়ে শারমিন সুলতানা (১৪) এর সাথে বর কামারখন্দ উপজেলার চালা গ্রামের আছাব উদ্দিন এর পুত্র রিপন হোসেন (২৪) এর বিয়ের আয়োজন চলছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে কাজী পালিয়ে যায়। কনে স্থানীয়  উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্রী। কনে অপ্রাপ্তবয়স্ক। এরপর ভ্রাম্যমাণ আদালত বাল্যবিবাহ বন্ধ করে দিয়ে বর রিপন হোসেনকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এরপর বিকাল ৫ টায়  সিরাজগঞ্জ সদরের রতনকান্দি ইউনিয়নের ফুলবয়ড়া এলাকায় অভিযান চালান ভ্রাম্যমাণ আদালত। তখন কনের বাড়ীতে কনে ফুলবয়ড়া গ্রামের মোখলেছুর রহমান এর কন্যা মহুয়া খাতুন (১৪) এর সাথে বর শ্যামপুর গ্রামের আব্দুল গণি এর পুত্র রায়হান আলী (২৭) এর বিয়ের আয়োজন চলছিল। কনে স্থানীয় উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্রী। এরপর ভ্রাম্যমাণ আদালত বাল্যবিবাহ বন্ধ করে দিয়ে বর রায়হান আলীকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন।এরপর সন্ধ্যা ৬ টায় সিরাজগঞ্জ সদরের রতনকান্দি ইউনিয়নের রুপেরবেড় গ্রামে কনের বাড়ীতে উপস্থিত হন ভ্রাম্যমাণ আদালত। তখন কনের বাড়ীতে কনে রুপেরবেড় গ্রামের গোলাম রব্বানীর মেয়ে সুবর্ণা খাতুন মীম (১৪) এর সাথে বর কাজীপুর উপজেলার বাঐখোলা গ্রামের মৃত শামসুল হক এর পুত্র আলমগীর হোসেন (১৪) এর বিয়ের আয়োজন চলছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে বর ও  কাজী পালিয়ে যায়। কনে স্থানীয় উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্রী। কনে অপ্রাপ্তবয়স্ক। এরপর ভ্রাম্যমাণ আদালত বাল্যবিবাহ বন্ধ করে দিয়ে কনের বাবা গোলাম রব্বানী ও বর আলমগীর প্রত্যেককে ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়।এরপর রাত  সাড়ে ৭ টায় বহুলী ইউনিয়নের কদমপাল এলাকায় অভিযান চালান ভ্রাম্যমাণ আদালত। তখন কনের বাড়ীতে কনে কদমপাল গ্রামের মফিজ উদ্দিন এর কন্যা তামান্না খাতুন (১৫) এর সাথে বর পৌর এলাকার সয়াধানগড়ার জাহাঙ্গীর হোসেন এর পুত্র জাহিদুল ইসলাম (২২) এর বিয়ের আয়োজন চলছিল। কনে স্থানীয় উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্রী। এরপর ভ্রাম্যমাণ আদালত বাল্যবিবাহ বন্ধ করে কনের বাবাকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এরপর রাত ৯ টায় শিয়ালকোল ইউনিয়নের ধুকুরিয়া দক্ষিণপাড়ায় অভিযান পরিচালনা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। তখন কনে ধুকুরিয়া দক্ষিণপাড়া গ্রামের ফেরদৌস শেখ এর  কন্যা ফারজানা খাতুন (১৩) এর সাথে কামারখন্দ উপজেলার মধ্যভদ্রঘাট গ্রামের ছুরুতজামান এর পুত্র শামছুল আলম (২২) এর বিবাহের আয়োজন চলছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে বরপক্ষ পালিয়ে যায়। কনে স্থানীয় উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেনীর ছাত্রী। কনে অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় বাল্যবিবাহ বন্ধ করা হয় এবং কনের বাবাকে ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। পরে রাত ১০ টায় সয়দাবাদ ইউনিয়নের কড্ডা কৃঞ্চপুর ভূইয়াপাড়া গ্রামে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালিত হয়।তখন কনের বাড়ীতে কনে কড্ডা কৃঞ্চপুর ভূইয়াপাড়া গ্রামের মৃত নায়েব আলী শেখ এর কন্যা হোসনেয়ারা খাতুন (১৭) এর সাথে বর একই গ্রামের মৃত মোস্তফা এর পুত্র হাসান আলী (১৬) এর বিয়ের আয়োজন চলছিল। বর ও কনে উভয়ই  অপ্রাপ্তবয়স্ক থাকায় বাল্যবিবাহ বন্ধ করে দিয়ে বরের ভাই ফিরোজ আহমেদ ও কনের ভাই ফুলার হোসেন এর প্রত্যেককে ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা  করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত এবং এরপর রাত ১১ টায় রতনকান্দি ইউনিয়নের কড়িপাড়া গ্রামে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালান।তখন কনের বাড়ীতে কনে কুড়িপাড়া গ্রামের বাবলু মন্ডল এর কন্যা মিম খাতুন(১১) এর সাথে বর মহিষামূড়া গ্রামের বিশা মিয়ার পুত্র আনিছুর রহমান (২৫) এর বিয়ের আয়োজন চলছিল।কনে স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী।প্রত্যেক প্রযোজ্য ক্ষেত্রে কনের বাবা ও বরের বাবার কাছ থেকে কনে ও বর প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত বিবাহ দিবেন না বলে মুচলেকা নেয়া হয়। বাল্যবিবাহগুলো বন্ধে সহযোগিতা করেন পৌর ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মোঃ নজরুল ইসলাম, আনসার ব্যাটালিয়ন পি.সি নুরুল ইসলাম ও আনসার ব্যাটালিয়নের সদস্যবৃন্দ।