সরকারি জায়গায় অবৈধ স্থাপনা নির্মানের মডেল যখন ইউপি চেয়ারম্যান!
শুভ কুমার ঘোষ, সিরাজগঞ্জ:
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুরি হাট পেরিফেরির সরকারি জায়গায় নিয়ম বহির্ভূতভাবে প্রশাসনের নির্দেশনা অমান্য করে অবৈধ পাকা স্থাপনা নির্মানের মহোতসব তৈরি হয়েছে। আর এর পিছনে মডেল হিসাবে কাজ করছে স্থানীয় কৈজুরি ইউপি চেয়ারম্যান মো. সাইফুল ইসলামের নির্মানাধীন একটি পাকা স্থাপনা। এই স্থাপনা সহ আরও দুটি নির্মানাধীন স্থাপনা বন্ধে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন লাল নিশান লাগিয়ে দিয়ে গেলেও তা ছুরে ফেলে কাজ শেষ করছেন এই চেয়ারম্যান সহ অসাধু কয়েকজন ব্যাবসায়ী। আর এদের এই বেপরোয়া কাজ দেখে নতুন করে পাকা ও আধাপাকা স্থাপনা নির্মানের কাজ শুরু করছেন আরও অনেকেই। তবে বিষয়টি সরেজমিনে দেখে মামলা করা হবে বলে জানিয়েছেন শাহজাদপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহ মো. শামসুজ্জোহা।
সোমবার (৯ আগস্ট) বিকেলে সরেজমিনে উপজেলার কৈজুরি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ইউনিয়ন পরিষদের সামনেই একটি পাকা স্থাপনা তৈরি করছেন ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম। যেটাতে না করার নির্দেশনা স্বরূপ উপজেলা প্রসাসনের নির্দেশে লাল নিশান লাগিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন স্থানীয় ভূমি কর্মকর্তা। এর পাশেই আরও দুইটি ভবন নির্মানের কাজ শেষ করেছেন স্থানীয় রশিদ মন্ডল ও সোহরাব নামে আরেক ব্যাবসায়ী। চেয়ারম্যানের স্থাপনার মতো সে দুটিতেও কাজ বন্ধে লাল নিশান লাগিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন সেই কর্মকর্তা। কিন্তু সবাই সেই নির্দেশনা ও লাল নিশান ছুরে ফেলে দিয়েছেন, মানেননি নির্দেশনা, সম্পন্ন করেছেন স্থাপনার কাজ।
যমুনা নদীর তীরবর্তী ছোট হয়ে যাওয়া হাটটি ঘুরে আরও দেখা গেছে, এদের দেখাদেখি কালু ব্যাপারি ও শুকুর আলী নামে আরও দুজন চাল ব্যাবসায়ী শুরু করেছেন পাকা স্থাপনা নির্মানের। নির্দেশনা অমান্য করে চেয়ারম্যান ও অন্য দুজনের কাজ শেষ করা দেখে এই কাজের প্রবনতা পেয়েছেন তারাও। এমনি জানা গেছে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে।
স্থানীয়দের সাথে কথা বললে চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ায় কথা বলতে চাননি অনেকেই। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকেই বলেন, পজিশন হিসাবে এই জায়গাটা কিনেছিলেন চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম। যা এলাকার ছোট বড় সবাই জানে। এবং তখন সেটি টিনের ঘর থাকলেও চেয়ারম্যান কিছুদিন আগে ভেঙ্গে ছাদ করে পাকা স্থাপনা নির্মানের কাজ শুরু করেন। এখন যা প্রায়ই শেষের দিকে।
এবিষয়ে কৈজুরি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সাইফুল ইসলাম বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, টিনের ঘরে চুরি ডাকাতি হয় এইজন্য ভেঙ্গে পাকা স্থাপনা নির্মাণ করেছি। আমি এসিল্যান্ডকে বলেছি যদি প্রয়োজন হয় তারা ভেঙ্গে দিতে পারেন। তবে কাজ বন্ধের জন্য প্রশাসন নির্দেশনা দেয়ার পরেও কেন তা অমান্য করে কাজ করলেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমি এসিল্যান্ডের সঙ্গে কথা বলেই কাজ শেষ করেছি।
কৈজুরি ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা মো. আইয়ুব আলী বলেন, ইউএনও ও এসিল্যান্ড স্যার এসে দেখে গিয়ে আমাকে সহকারী কমিশনার (ভূমি) স্যার কাজটি বন্ধ করে দিতে নির্দেশ দেওয়ায় আমি চেয়ারম্যানের স্থাপনাটি সহ তিনটি নির্মানাধীন ভবনে লাল পতাকা বেধে দিয়ে কাজ বন্ধ করতে বলে এসেছিলাম। কিন্তু তারা তাও শোনেনি। আমি বিষয়টি এসিল্যান্ড স্যারকে জানাই এবং এক পর্যায়ে চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলাই। এবিষয়ে আপনাকে এখন ইউএনও স্যার বিস্তারিত বলতে পারবেন বলেও জানান তিনি।
তবে এবিষয়ে কথা বলার জন্য শাহজাদপুরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর ব্যাবহৃত অফিসিয়াল মুঠোফোনে একাধিকাবার কল দিলেও সাড়া মেলেনি। কার্যালয়ে খোজ নিয়ে জানা গেছে, আগের এসিল্যান্ড বদলি জনিত কারনে চলে গেছেন এবং নতুন এসিল্যান্ড যোগদান করেই আছেন ছুটিতে।
এবিষয়ে সোমবার (৯ আগস্ট) রাত ১০টার দিকে শাহজাদপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহ মো. শামসুজ্জোহা বলেন, আমি কালকেই আবার একবার যেয়ে সরেজমিনে দেখে সেই অনুযায়ী ব্যাবস্থা নিবো। এছাড়াও এদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।