উল্লাপাড়া

উল্লাপাড়ায় মাছ সংকটে শুটকি চাতাল বন্ধের পথে নারী শ্রমিক ছাঁটাই

উল্লাপাড়া প্রতিনিধিঃ মোঃ আব্দুস ছাত্তার

 

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় মাছ সংকটে শুটকি চাতালগুলো বন্ধের পথে । বন্যার পানি দেরিতে এসে স্বল্প সময়ের মধ্যে তা দ্রুত চলে যাওয়ায় এবং বাদাই ও চায়না দুয়ারি জাল দিয়ে প্রতিনিয়ত মাছ ধরার কারণে মাছের সংকট সৃষ্টি হয়েছে । শুটকি করতে পর্যাপ্ত পরিমান মাছের প্রয়োজন তা পাওয়া যাচ্ছে না । মাছ সংকটের কারণে শুটকির চাতাল গুলো থেকে নারী শ্রমিকদের ছাঁটাই করা হচ্ছে । প্রতিবছর ওই মাছ শুটকির চাতাল গুলোতে ১ শ’রও বেশী নারী শ্রমিক কর্ম করে জীবীকা নির্বাহ করে আসছিলো ।

এ বছরে এসে মাত্র ২০/২৫ জন নারী শ্রমিক কাজে নিয়োজিত রয়েছে । বাঁকি শ্রমিক ছাঁটাই করা হয়েছে । উল্লাপাড়া উপজেলার মোহনপুর, বড় পাঙ্গাসী কলেজ এলাকায় ও বড় পাঙ্গাসীর বেশ কয়েকটি এলাকায় এবং মোহনপুর উধুনিয়া সড়কের দু’ধারে প্রায় আড়াই যুগ পূর্ব থেকেই মাছ শুটকি করার চাতাল গড়ে উঠেছে । বর্ষা মৌসুম শুরু হলেই মাছ শুকানো শুরু হয় । চলে চার থেকে পাঁচ মাস ।

গত কয়েক বছরেই বহু সংখ্যক চাতাল গড়ে উঠে ওই এলাকায় । চলে জমজমাট শুটকির ব্যবসা । এবারও চাতাল বসানো হয়েছে । তবে মাছ সংকটে ব্যবসা মন্দা যাচ্ছে । চাতাল মালিকরা জানান, প্রতিদিন ভোরে স্থানীয় লাহিড়ী মোহনপুর পাইকারী মাছ বাজারের আড়ত থেকে এবং বিভিন্ন এলাকা থেকে তারা শুটকি করার জন্য দেশীয় নানা জাতের মাছ পাইকারি দরে কিনে আনেন। তারা দেশীয় পুঁটি, টেংরা, চাঁদা, বাইমসহ নানা জাতের ছোট মাছ কিনে এনে চাতালগুলোর উপর ছড়িয়ে দিয়ে শুকায়ে শুটকি করেন । তা আধুনিক পদ্ধতিতে প্যাকেট জাত করে বগুড়া, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁ, সৈয়দপুর, রংপুর, পঞ্চগড় সহ উত্তর অঞ্চলের জেলাগুলোর বিভিন্ন বাজারে পাইকারি দরে বিক্রি করেন। উপজেলার মোহনপুর এলাকায় প্রায় ১৫ জন শুটকি মাছের ব্যবসার সাথে জড়িত আছেন । বর্তমানে মাছের অপ্রতুলতার পাশাপাশি শুকানো শুঁটকি মাছ সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেই, ফলে অনেক সময় শুঁটকি মাছ নষ্ট হয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন বলেও জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

শুঁটকি ব্যবসায়ী আ. মতিন জানালেন, অগ্রহায়ণ মাসে পানি না শুকানো পর্যন্ত চাতালগুলো চালু থাকে। এসময় শুটকি শুকানোর জন্য সহস্রাধিক পরিবার চাতালগুলোতে কাজ করেন। কিন্তু আগের মত সেই কর্ম চঞ্চলতা নেই। কারণ এবার বন্যার পানিতে পর্যাপ্ত মাছ নেই । মাছের সংকটের কারণে চলতি বছর শুঁটকির উৎপাদনও কম হবে বলে তিনি জানান। শুটকি মাছের ব্যবসায় জড়িতরা হলেন—ফরহাদ সরকার , আউয়াল প্রামাণিক, হবিবর শেখ, সাচ্চু মন্ডল, ইউসুফ ফকির, নুর মোহাম্মদ, কবির শেখ, রফিকুল ইসলাম, শাহ আলম, নজরুল ইসলাম । এরা সবাই দেড় থেকে প্রায় দু’যুগ ধরে এ শুটকি মাছ ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছেন ।

তারা জানান, চাতালগুলোয় মাছ শুকানো থেকে শুরু করে বাছাইয়ের যাবতীয় কাজে নারী শ্রমিকদের সংখ্যা বেশি। এরা সবাই ২ শত টাকা দিন হাজিরায় শুটকির চাতালে ভোর ৬ টা থেকে সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত কাজ করেন । এ প্রতিবেদককে মহিরন বেগম, আছিয়া খাতুন জানান, তারা সংসারের অভাব-অনটন থাকায় তা দুর করার লক্ষে বাড়তি আয়ের জন্য এখানকার শুটকির চাতালগুলোতে কাজ করেন। উপজেলার চন্দ্রগাতি গ্রামের মহিরন বেগম ও রাবেয়া খাতুন বাড়ি থেকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার সড়ক পথ পায়ে হেঁটে এসে ওই শুটকির চাতালে কাজ করেন, আবার পায়ে হেঁটেই বাড়ি ফেরেন বলে জানান। তারা পুরা মৌসুমেই শুটকির চাতালে কাজ করেন ।

কবির শেখ, সাচ্চু মন্ডল বলেন, মোহনপুর এলাকা থেকে প্রতি বছর পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচশো মন শুটকি মাছ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করা হয়। সেখানে এবার এ যাবত প্রায় বিশ থেকে পঁচিশ মন শুটকি মাছ ওই বাজারগুলোতে বিক্রি হয়েছে । পর্যাপ্ত মাছ না থাকায় চাতালগুলোর শ্রমিক সংখ্যা কমানো হয়েছে। এবারে স্বাভাবিক বর্ষা না হওয়ায় মাছ মেলেনি। আবার মৌসুম পেরিয়ে অনেকটা অসময়ে স্বাভাবিক বর্ষা হলেও পানি থেকেছে মাত্র ক’দিন। এতে করে সব মিলিয়ে পর্যাপ্ত মাছ না মেলায় চাতালগুলো কোনোমতে চালানো হচ্ছে । চাতালগুলোতে প্রায় সবাই নারী শ্রমিক। শুটকির মৌসুম শুরুতেই শতাধিক নারী শ্রমিক কাজ করেন । সেখানে এবার মাত্র ২০ থেকে ২৫ জন নারী শ্রমিক দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে । মৌসুম প্রায় শেষের দিকে। এ মৌসুমে মাত্র একশো মণ মাছ শুটকি করার আশা করছেন তারা ।